বিষয়: পার্থক্যকৃত শিক্ষণ (Differentiated Instructions):
বিষয়বস্তু, প্রক্রিয়া এবং
ফলাফল(
১. ভূমিকা ও পটভূমি (Introduction and Background)
পার্থক্যকৃত
শিক্ষণ (Differentiated
Instruction) হলো এমন একটি
শিক্ষণ কৌশল, যা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা, দক্ষতা, আগ্রহ এবং শিক্ষণ শৈলী অনুযায়ী শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে
কাস্টমাইজ করে। এটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সক্ষমতা, পটভূমি এবং শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তার
ভিত্তিতে শিক্ষণকে নমনীয় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে। পার্থক্যকৃত শিক্ষণের
মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাদের সম্ভাবনা পূর্ণরূপে বিকশিত করতে সক্ষম
করা, যাতে তারা শ্রেণিকক্ষে সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করতে পারে এবং শিক্ষাগত সাফল্য অর্জন করতে পারে।
পার্থক্যকৃত
শিক্ষণ তিনটি প্রধান উপাদানের উপর ভিত্তি করে কাজ করে:
- বিষয়বস্তু (Content): শিক্ষার্থীদের যে তথ্য বা জ্ঞান
শেখানো হয়।
- প্রক্রিয়া (Process): শিক্ষার্থীরা কীভাবে তথ্য শিখে বা
বোঝে।
- ফলাফল (Product): শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষণের ফলাফল
কীভাবে প্রকাশ করে বা প্রদর্শন করে।
এই নোটে
পার্থক্যকৃত শিক্ষণের এই তিনটি উপাদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, যা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিশেষত ‘অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি অধিকার
আইন, ২০১৬’ (RPWD Act, 2016) এবং ‘জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০’ (NEP 2020)-এর আলোকে
প্রাসঙ্গিক। এই কৌশলগুলি সাধারণ শিক্ষার্থী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং প্রতিভাধর
শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করে।
২. বিষয়বস্তু (Content)
বিষয়বস্তু বলতে
শিক্ষার্থীদের শেখানো তথ্য, ধারণা বা দক্ষতাকে বোঝায়। পার্থক্যকৃত
শিক্ষণে বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা, আগ্রহ এবং শিক্ষণ শৈলী অনুযায়ী সামঞ্জস্য করা হয়, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী তথ্য গ্রহণ করতে
পারে।
কৌশল (Strategies)
- বিষয়বস্তুর
স্তরভিত্তিক সামঞ্জস্য:
- শিক্ষার্থীদের
দক্ষতার স্তর অনুযায়ী বিষয়বস্তু সরলীকৃত বা জটিল করা।
- উদাহরণ:
গণিতে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য মৌলিক ধারণা এবং প্রতিভাধর
শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত সমস্যা সমাধান।
- বিভিন্ন
মাধ্যমে উপস্থাপন:
- বিষয়বস্তু
লিখিত, মৌখিক, দৃশ্যমান বা ডিজিটাল ফরম্যাটে
প্রদান।
- উদাহরণ:
ইতিহাসের পাঠে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি ভিডিও, ডায়াগ্রাম বা অডিও বই ব্যবহার।
- বিশেষ
চাহিদার জন্য অভিযোজন:
- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বা টেক্সট-টু-স্পিচ সফটওয়্যার।
- শ্রবণপ্রতিবন্ধী
শিক্ষার্থীদের জন্য সাংকেতিক ভাষার দোভাষী বা সাবটাইটেল।
- উদাহরণ:
ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বড় মুদ্রণ বা অডিও বই।
- আগ্রহভিত্তিক
বিষয়বস্তু:
- শিক্ষার্থীদের
পছন্দ বা আগ্রহের সাথে বিষয়বস্তু সংযুক্ত করা।
- উদাহরণ:
বিজ্ঞানে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবেশ বিজ্ঞানের পাঠ বা শিল্পকলায়
আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিহাসের শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ।
- প্রযুক্তিগত
সহায়তা:
- ডিজিটাল
প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষণমূলক
অ্যাপ বা ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড ব্যবহার।
- উদাহরণ: Khan Academy বা Google Classroom-এর মাধ্যমে
কাস্টমাইজড বিষয়বস্তু প্রদান।
- সমৃদ্ধি ও
ত্বরান্বিত শিক্ষণ:
- প্রতিভাধর
শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত বিষয়বস্তু বা গভীর গবেষণা প্রকল্প।
- উদাহরণ:
গণিতে দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যালকুলাস বা প্রোগ্রামিং।
প্রয়োজনীয়তা
- শিক্ষার্থীদের
জ্ঞানগত, সংবেদী বা
শারীরিক বৈচিত্র্যের কারণে একই বিষয়বস্তু সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
পার্থক্যকৃত বিষয়বস্তু এই বৈচিত্র্যকে সমাধান করে।
- উদাহরণ:
অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমান এইড বা সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা সহ
বিষয়বস্তু প্রদান।
- এই কৌশলগুলি
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে সমান সুযোগ প্রদান করে এবং তাদের শ্রেণিকক্ষে
অংশগ্রহণ বাড়ায়।
৩. প্রক্রিয়া (Process)
প্রক্রিয়া বলতে
শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু শেখার বা বোঝার পদ্ধতিকে বোঝায়। পার্থক্যকৃত শিক্ষণে
প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ শৈলী, সক্ষমতা এবং আগ্রহ অনুযায়ী সামঞ্জস্য করা হয়, যাতে তারা সক্রিয়ভাবে শিক্ষণ
প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে।
কৌশল (Strategies)
- নমনীয়
গ্রুপিং:
- শিক্ষার্থীদের
মিশ্র সক্ষমতা, আগ্রহ বা
শিক্ষণ শৈলীর ভিত্তিতে গ্রুপে ভাগ করা।
- উদাহরণ:
গণিতে একটি গ্রুপ হ্যান্ডস-অন কার্যক্রমে এবং অন্য গ্রুপ ডিজিটাল সিমুলেশনে
কাজ করে।
- ইন্টারেক্টিভ
শিক্ষণ:
- গ্রুপ
আলোচনা, বিতর্ক, সমস্যাভিত্তিক শিক্ষণ বা
অনুসন্ধান-ভিত্তিক শিক্ষণ।
- উদাহরণ:
বিজ্ঞানের পাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ইতিহাসের পাঠে বিতর্ক।
- শিক্ষণ শৈলীর
বৈচিত্র্য:
- দৃশ্যমান (visual), শ্রবণগত (auditory) এবং গতিশীল (kinesthetic) শিক্ষণ
শৈলীর জন্য কার্যক্রম।
- উদাহরণ:
দৃশ্যমান শিক্ষার্থীদের জন্য ডায়াগ্রাম, শ্রবণগত শিক্ষার্থীদের জন্য পডকাস্ট, এবং গতিশীল শিক্ষার্থীদের জন্য
মডেল তৈরি।
- প্রযুক্তিগত
সহায়তা:
- ইন্টারেক্টিভ
অ্যাপ, ভিডিও
টিউটোরিয়াল বা ডিজিটাল গেম ব্যবহার।
- উদাহরণ:
শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত শেখার জন্য Mathletics বা Kahoot।
- স্ব-নিয়ন্ত্রিত
শিক্ষণ:
- শিক্ষার্থীদের
নিজেদের শিক্ষণ লক্ষ্য নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের সুযোগ।
- উদাহরণ:
শিক্ষার্থীদের নিজস্ব প্রকল্প পরিকল্পনা বা গবেষণা।
- বিশেষ
চাহিদার জন্য অভিযোজন:
- ADHD সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য
মুভমেন্ট ব্রেক বা সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম।
- অটিজম
সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমান সময়সূচী বা শান্ত কোণ।
- উদাহরণ: ডিসলেক্সিয়া
সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য মৌখিক নির্দেশনা বা ভিজ্যুয়াল এইড।
প্রয়োজনীয়তা
- শিক্ষার্থীদের
শিক্ষণ শৈলী এবং জ্ঞানগত সক্ষমতার বৈচিত্র্যের কারণে একই প্রক্রিয়া সবার
জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। পার্থক্যকৃত প্রক্রিয়া তাদের শিক্ষণে সক্রিয়
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
- উদাহরণ:
গতিশীল শিক্ষার্থীরা হ্যান্ডস-অন কার্যক্রমে ভালো ফলাফল করে, যেখানে দৃশ্যমান শিক্ষার্থীরা
ডায়াগ্রাম বা ভিডিও থেকে উপকৃত হয়।
- এই কৌশলগুলি
শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় আগ্রহী ও অনুপ্রাণিত রাখে।
৪. ফলাফল (Product)
ফলাফল বলতে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষণের ফলস্বরূপ তাদের জ্ঞান, দক্ষতা বা বোঝাপড়া প্রকাশের পদ্ধতিকে বোঝায়। পার্থক্যকৃত
শিক্ষণে ফলাফল শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা, আগ্রহ এবং শিক্ষণ শৈলী অনুযায়ী নমনীয় হয়, যাতে তারা তাদের শিক্ষণ প্রদর্শন করতে
পারে।
কৌশল (Strategies)
- বিভিন্ন
প্রকাশ মাধ্যম:
- শিক্ষার্থীদের
লিখিত, মৌখিক, দৃশ্যমান বা ব্যবহারিক মাধ্যমে
ফলাফল প্রকাশের সুযোগ।
- উদাহরণ: ইতিহাসের
পাঠে শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ, ভিডিও উপস্থাপনা বা পোস্টার তৈরি করতে পারে।
- নমনীয়
মূল্যায়ন ফরম্যাট:
- লিখিত
পরীক্ষার পরিবর্তে প্রকল্প, উপস্থাপনা, বিতর্ক বা শিল্পকর্ম।
- উদাহরণ:
ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য মৌখিক উপস্থাপনা বা ভিজ্যুয়াল
প্রকল্প।
- প্রযুক্তিগত
সহায়তা:
- স্পিচ-টু-টেক্সট
বা ভয়েস রেকর্ডার ব্যবহার করে ফলাফল প্রকাশ।
- উদাহরণ:
লোকোমোটর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড ডিভাইস।
- সৃজনশীল
প্রকল্প:
- শিক্ষার্থীদের
সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য শিল্পকর্ম, মডেল বা গল্প লেখার সুযোগ।
- উদাহরণ:
বিজ্ঞানের পাঠে সৌরশক্তি-চালিত মডেল বা পরিবেশ বিষয়ে পোস্টার।
- ব্যক্তিগতকৃত
ফলাফল:
- শিক্ষার্থীদের
আগ্রহ বা দক্ষতা অনুযায়ী ফলাফলের ধরন নির্বাচন।
- উদাহরণ:
শিল্পকলায় দক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিহাসের পাঠে চিত্রকর্ম তৈরি।
- প্রক্রিয়া-ভিত্তিক
মূল্যায়ন:
- শিক্ষার্থীদের
চূড়ান্ত ফলাফলের পাশাপাশি তাদের প্রচেষ্টা এবং প্রক্রিয়া মূল্যায়ন।
- উদাহরণ:
গ্রুপ প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও অবদান বিবেচনা।
প্রয়োজনীয়তা
- শিক্ষার্থীদের
শারীরিক, জ্ঞানগত বা
সংবেদী সীমাবদ্ধতার কারণে ঐতিহ্যগত মূল্যায়ন (যেমন, লিখিত পরীক্ষা) সবার জন্য উপযুক্ত
নাও হতে পারে। পার্থক্যকৃত ফলাফল তাদের জ্ঞান প্রকাশের সুযোগ দেয়।
- উদাহরণ:
অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থী দৃশ্যমান প্রকল্পে ভালো ফলাফল করে, যেখানে শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী
লিখিত প্রকল্পে দক্ষ।
- এই কৌশলগুলি
শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের শিক্ষাগত সাফল্য নিশ্চিত করে।
৫. বাস্তবায়নের ধাপসমূহ (Steps for Implementation)
পার্থক্যকৃত
শিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
ধাপ ১: শিক্ষার্থীদের চাহিদা মূল্যায়ন
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীদের শারীরিক, সংবেদী, জ্ঞানগত, আগ্রহ এবং শিক্ষণ শৈলী সনাক্ত করতে
শিক্ষক, অভিভাবক, মনোবিজ্ঞানী বা বিশেষ শিক্ষাবিদের
সাথে পরামর্শ।
- সরঞ্জাম: শিক্ষাগত মূল্যায়ন, শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা প্রতিবেদন।
- উদাহরণ: শিক্ষার্থীর শিক্ষণ শৈলী (দৃশ্যমান, শ্রবণগত, গতিশীল) বা বিশেষ চাহিদা সনাক্তকরণ।
ধাপ ২: ব্যক্তিগত শিক্ষা পরিকল্পনা (IEP) তৈরি
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীদের জন্য IEP তৈরি করা, যেখানে তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা, শিক্ষার লক্ষ্য এবং পার্থক্যকৃত
কৌশলের বিবরণ থাকবে।
- অংশগ্রহণকারী: শিক্ষক, অভিভাবক, বিশেষ শিক্ষাবিদ এবং প্রয়োজনে
শিক্ষার্থী।
- উদাহরণ: IEP-তে উল্লেখ করা যেতে পারে যে
শিক্ষার্থী অডিও বই, মৌখিক
মূল্যায়ন এবং গ্রুপ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে।
ধাপ ৩: পার্থক্যকৃত কৌশল নির্বাচন
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী
বিষয়বস্তু, প্রক্রিয়া
এবং ফলাফলের উপযুক্ত কৌশল নির্বাচন।
- বিবেচনা: শিক্ষার্থীর বয়স, শিক্ষাগত স্তর, প্রতিবন্ধকতার ধরন এবং শ্রেণির
পরিবেশ।
- উদাহরণ: অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থীর জন্য
দৃশ্যমান সময়সূচী এবং ভিজ্যুয়াল প্রকল্প।
ধাপ ৪: বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ
- প্রক্রিয়া: নির্বাচিত কৌশল শ্রেণিকক্ষে
বাস্তবায়ন করা এবং শিক্ষার্থীর অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
- পদ্ধতি: শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া, অভিভাবকের মতামত এবং শিক্ষাগত ফলাফল
বিশ্লেষণ।
- উদাহরণ: শিক্ষার্থী অডিও বই ব্যবহার করে পাঠ
বুঝতে পারছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ।
ধাপ ৫: মূল্যায়ন ও সমন্বয়
- প্রক্রিয়া: নির্দিষ্ট সময় পর পর কৌশলগুলির
কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন বা নতুন কৌশল প্রয়োগ।
- সরঞ্জাম: শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল, আচরণগত পরিবর্তন এবং
শিক্ষক-অভিভাবকের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ।
- উদাহরণ: যদি শিক্ষার্থী মৌখিক মূল্যায়ন
থেকে উপকৃত না হয়, তবে
ভিজ্যুয়াল প্রকল্প প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ধাপ ৬: অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে
নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা এবং তাদের মতামত গ্রহণ করা।
- উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীর চাহিদা এবং অগ্রগতি
সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
- উদাহরণ: IEP সভায় অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীর
শিক্ষাগত অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা।
৬. বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান (Challenges and Solutions)
চ্যালেঞ্জ
- সম্পদের অভাব: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি, শিক্ষণ সামগ্রী বা প্রশিক্ষিত
শিক্ষকের অভাব।
- শিক্ষকের
প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের
পার্থক্যকৃত শিক্ষণ বা বিশেষ শিক্ষায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নাও থাকতে পারে।
- বৈচিত্র্যময়
চাহিদা: একই শ্রেণিতে
বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীর চাহিদা পূরণ করা কঠিন।
- সময়
ব্যবস্থাপনা: পার্থক্যকৃত
শিক্ষণের জন্য অতিরিক্ত পরিকল্পনা ও সময় প্রয়োজন।
- সামাজিক
দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতিবন্ধী
বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
সমাধান
- প্রশিক্ষণ
কর্মসূচি: শিক্ষকদের
জন্য পার্থক্যকৃত শিক্ষণ, বিশেষ শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ।
- সরকারি ও
বেসরকারি সহায়তা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
অর্থায়ন, প্রযুক্তি
এবং শিক্ষণ সামগ্রীর জন্য সহযোগিতা।
- সচেতনতা
বৃদ্ধি: সমাজে বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার জন্য
প্রচারণা।
- ব্যক্তিগতকৃত
পরিকল্পনা: প্রতিটি
শিক্ষার্থীর জন্য IEP তৈরি করে
তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ।
- সময়
ব্যবস্থাপনা কৌশল: শিক্ষকদের
জন্য সময় ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনার গাইডলাইন প্রদান।
৭. বাস্তব উদাহরণ ও সাফল্যের গল্প (Practical Examples and Success Stories)
- বিষয়বস্তু: একটি শ্রেণিতে ইতিহাসের পাঠ বিভিন্ন
মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বই, শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য
সাবটাইটেলযুক্ত ভিডিও এবং প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা প্রকল্প
প্রদান করা হয়।
- প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানের পাঠে শিক্ষার্থীদের মিশ্র
সক্ষমতার গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপ হ্যান্ডস-অন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশ
নেয়, অন্য গ্রুপ
ডিজিটাল সিমুলেশনে কাজ করে, এবং অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমান
সময়সূচী প্রদান করা হয়।
- ফলাফল: ইংরেজি পাঠে শিক্ষার্থীরা তাদের
জ্ঞান প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মাধ্যম বেছে নেয়। একজন শিক্ষার্থী গল্প লেখেন, অন্যজন ভিডিও উপস্থাপনা তৈরি করেন, এবং অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থী একটি
পোস্টার তৈরি করেন।
- সাফল্যের
গল্প: ভারতের একটি
স্কুলে পার্থক্যকৃত শিক্ষণ প্রয়োগ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের
জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়। একজন ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন
শিক্ষার্থী মৌখিক উপস্থাপনার মাধ্যমে বিজ্ঞান প্রকল্পে অংশ নেন এবং জাতীয়
বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেন।
৮. উপসংহার (Conclusion)
পার্থক্যকৃত
শিক্ষণ একটি শক্তিশালী কৌশল, যা শিক্ষার্থীদের
বৈচিত্র্যময় চাহিদা, দক্ষতা এবং আগ্রহ পূরণে সহায়ক।
বিষয়বস্তু, প্রক্রিয়া এবং ফলাফলের পার্থক্যকরণ
শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক
এবং সমৃদ্ধ শিক্ষণ পরিবেশ তৈরি করে। শিক্ষক, অভিভাবক, বিশেষ শিক্ষাবিদ
এবং নীতিনির্ধারকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই কৌশলগুলি শ্রেণিকক্ষে বাস্তবায়ন করা
যায়। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং সম্পদের মাধ্যমে পার্থক্যকৃত
শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, সামাজিক এবং
মানসিক সাফল্য নিশ্চিত করে, যা একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক
শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে।