Psychoanalytic theory
Psychoanalytic theory and psychosexual stages of development
ফ্রয়েডের মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বের
বিস্তারিত:
জেন সিগমণ্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯)
ছিলেন একজন অস্ট্রিয়ান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনস্তাত্ত্বিক, যিনি মনস্তাত্ত্বিক
তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর তত্ত্বগুলি মানব ব্যক্তিত্ব, আচরণ এবং মানসিক
প্রক্রিয়াগুলির বিকাশের মধ্যে যৌনতার কেন্দ্রিক ভূমিকা সম্পর্কে একটি নতুন
দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
মূল দিকগুলি:
- মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়গুলি: ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তিত্বের বিকাশ পাঁচটি পর্যায়ে ঘটে
— মৌখিক, মলদ্বার, যৌন, লেটেন্সি, এবং যৌন পর্যায়। প্রতিটি পর্যায়ে যৌনতার
একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রীভূততা থাকে।
- ওয়েডিপাস জটিলতা: ফ্রয়েড
বলেছিলেন যে, শিশুর যৌন আকর্ষণ সাধারণত মাতার প্রতি এবং পিতার প্রতি শত্রুতা
তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকে, যা ব্যক্তিত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে।
- অবচেতন:
ফ্রয়েডের তত্ত্বে অবচেতন মন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি
বিশ্বাস করতেন যে মানুষের অনেক আচরণ এবং চিন্তা অবচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয়।
- মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা:
ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তিত্বের বিকাশের সময় যদি কোনও পর্যায়ে সমস্যার সৃষ্টি
হয়, তবে তা ভবিষ্যতে মানসিক সমস্যা এবং আচরণগত অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে পারে।
ফ্রয়েডের তত্ত্বগুলি মানুষের মন ও
আচরণের জটিলতাকে বোঝার জন্য একটি ভিত্তি তৈরি করেছে এবং তাঁর কাজগুলো আধুনিক
মনস্তাত্ত্বিক চিন্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
"মনোবিশ্লেষণ (Psychoanalysis) হল মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা, যা নিজেই
মনোবিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়নি। এটি আধুনিক মনোরোগবিদ্যার একটি কোণার বিষয় হিসেবে রয়ে
গেছে কারণ মনোবিশ্লেষণের অগ্রদূত সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রকৃতপক্ষে একজন স্নায়ু-জীববিদ
ছিলেন (যিনি মনোরোগবিদ্যার ক্ষেত্রের অন্তর্গত)।"
মনের গঠন:
ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মনের গঠনকে
দুটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত, তিনি এটিকে তিনটি স্তরে ভাগ
করেছেন—চেতন, অবচেতন, এবং অচেতন। দ্বিতীয়ত, তিনি তিনটি উপাদান প্রস্তাব
করেছেন—ইড, ইগো, এবং সুপার ইগো। আসুন আমরা এই শব্দগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি।
চেতন:
মনের এই অংশটি একটি নদীর উপরের পৃষ্ঠের স্তরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এটি
আমাদের মোট মানসিক জীবনের মাত্র দশভাগের একভাগ দখল করে। যে ধারণা, চিন্তা এবং
চিত্রগুলি আমরা আমাদের মানসিক জীবনের যে কোনো মুহূর্তে সচেতনভাবে উপলব্ধি করি, তা
হল মনের চেতন অংশ।
অবচেতন:
অবচেতন মন হল সেই অংশ, যা সাধারণ স্মৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। যখন আমরা নির্দিষ্ট
কোনো সময়ে সচেতনভাবে এই তথ্য সম্পর্কে অবগত নই, তখনও আমরা প্রয়োজনে তা স্মৃতি
থেকে বের করে চেতনে আনতে পারি।
অচেতন:
অবচেতন মনের নিচে অচেতন অবস্থিত, যা আমাদের মনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি
সকল দমিত আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, অনুভূতি, প্রেরণা এবং চালনা ধারণ করে, যেগুলোর অনেকটাই
যৌনতা ও আগ্রাসনের সাথে সম্পর্কিত।
ইড, ইগো এবং সুপার ইগো ধারণা:
ইড (Id):
আইড মানুষের পশুবৃত্তির প্রতীক এবং এটি অচেতনে অবস্থান করে। এটি মানসিক শক্তি এবং
ব্যক্তির সকল প্রাকৃতিক প্রবৃত্তির উৎস। এটি সম্পূর্ণ স্বার্থপর এবং নীতিহীন। এটি
আনন্দ নীতির (Pleasure Principle) অধীনে কাজ করে।
ইগো (Ego):
ইগো তিনটি শক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটি একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী
ভূমিকা পালন করে, অর্থাৎ বাস্তবতার ভিত্তিতে আইডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুপার ইগোকে
সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, ইগোকে ব্যক্তিত্বের নির্বাহী
(Executive) হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সুপার ইগো (Super Ego):
এটি আইডের বিপরীত। এটি মনের নৈতিক এবং নীতিগত দিকগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে। এটি চেতন
মনে অবস্থান করে। এটি আনন্দ খোঁজার বা ধ্বংসাত্মক না হয়ে আদর্শবাদী (Idealistic)
প্রকৃতির।
Fig: source (Psychology Wiki/Fandom)
মনোবৈকল্যগত (Psychosexual) বিকাশ তত্ত্ব,
যা লিবিডো (Libidinal) বিকাশ তত্ত্ব নামেও পরিচিত, মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ
কীভাবে ঘটে তা বোঝানোর অন্যতম প্রাচীন তত্ত্ব। এই তত্ত্বের গুরুত্ব সিগমুন্ড
ফ্রয়েডের মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের সাথে তার ক্লিনিকাল গবেষণার ফলাফল থেকে
উদ্ভূত। তবে, মনোবৈকল্যগত বিকাশ তত্ত্ব হল ফ্রয়েড প্রস্তাবিত মনোদৈহিক
(Psychodynamic) ব্যক্তিত্ব তত্ত্বের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ফ্রয়েডকে প্রায়শই
প্রথম মনস্তাত্ত্বিক তাত্ত্বিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় যিনি ব্যক্তিত্বের
বিকাশমূলক দিকগুলির ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন এবং শৈশবের প্রাথমিক অভিজ্ঞতাগুলো
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মূল চরিত্র কাঠামো গঠনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,
তা তুলে ধরেছিলেন।
ফ্রয়েডের মতে, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে
একজন ব্যক্তি কয়েকটি গতিশীলভাবে পৃথক বিকাশ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়, যা
স্বতন্ত্র কার্যকরী পদ্ধতিগুলির দ্বারা চিহ্নিত হয়। এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করে যে
বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষত শৈশবে ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলি মানসিক সমস্যাসহ বিভিন্ন
মনোবৈকল্যগত সমস্যার কারণ হতে পারে। মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের উপর তার
প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে, ফ্রয়েড দেখেছেন যে প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক সমস্যার
লক্ষণগুলো ইরোটিক প্রবৃত্তির বাধাগ্রস্ততার সাথে সম্পর্কিত। এই ধরনের বাধাগ্রস্ততা
প্রায়শই জীবনের প্রথম বছর থেকেই শুরু হয় এবং পুরো শৈশবকালে অব্যাহত থাকে। ফলে,
ফ্রয়েড বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে শিশুদের মধ্যে যৌন আবেগের প্রকাশ দেখা যায় এবং
যে কোনো ব্যক্তিত্ব তত্ত্বে শৈশবের যৌনতা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
যৌনতার ধারণা:
ফ্রয়েডের মতে, যৌনতা একটি ব্যক্তির
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবনীশক্তি। তার মতে, যৌন প্রবৃত্তি বিভিন্ন শারীরিক
প্রয়োজনের উপর কেন্দ্রীভূত হয়, যা ইরোটিক আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করে। এই প্রতিটি
আকাঙ্ক্ষার উৎস শরীরের একটি ভিন্ন অংশে থাকে, যাকে ইরোজেনাস জোন (Erogenous Zones)
বলা হয়। ইরোজেনাস জোন হল ত্বক বা শ্লেষ্মা ঝিল্লির এমন একটি অংশ যা উত্তেজনার প্রতি
অত্যন্ত সংবেদনশীল, এবং নির্দিষ্ট উপায়ে এটি পরিচালনা করলে উত্তেজনা দূর হয় এবং
আনন্দজনক অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়। ঠোঁট এবং মুখ, মলদ্বার অঞ্চল, এবং যৌন
অঙ্গ ইরোজেনাস জোনের উদাহরণ। যেমন, চোষা থেকে মৌখিক আনন্দ, নির্গমন থেকে মলদ্বার
আনন্দ এবং ঘষা থেকে যৌনাঙ্গের আনন্দ উৎপন্ন হয়। সংক্ষেপে, ফ্রয়েড যৌন
প্রবৃত্তিকে একটি মনো-শারীরিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন, যার মানসিক এবং
শারীরিক উভয় প্রকাশ রয়েছে। তিনি লিবিডো (Libido) শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, যা
দ্বারা যৌন প্রবৃত্তির মনের মধ্যে প্রকাশিত শক্তিকে বোঝানো হয়।
মোটকথা, ফ্রয়েড যৌনতা শব্দটি ব্যবহার
করেছেন ব্যক্তির ইরোটিক জীবন বোঝানোর জন্য। তার মতে, যৌনতা শুধুমাত্র
প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয় নয়, এটি শৈশবেও উপস্থিত থাকে। এটি সর্বব্যাপী এবং সমস্ত
ক্রিয়াকলাপ এবং অনুভূতিকে আবৃত করে, যা আনন্দদায়ক এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তৃপ্তি
প্রদান করে। ফ্রয়েড লক্ষ্য করেছিলেন যে শিশুরা জন্ম থেকেই ইরোটিক ক্রিয়াকলাপ
করতে সক্ষম। শৈশবের যৌনতার প্রাথমিক প্রকাশ শরীরের কার্যক্রম যেমন খাওয়ানো এবং
বর্জ্য নিষ্কাশনের সাথে সম্পর্কিত। ফ্রয়েডের সব ধারণার মধ্যে, শিশু এবং অল্পবয়সী
শিশুদের ইরোটিক জীবনের বিষয়ে তিনি যে ধারণা দিয়েছিলেন তা বিভিন্ন দিক থেকে কঠোর
সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল।
মনোবৈকল্যগত (Psychosexual)
বিকাশের স্তরসমূহ
ব্যক্তিত্ব বিকাশ জীবনীশক্তির (Life
Instinct) ক্রমাগত সক্রিয়করণের মাধ্যমে ঘটে। যৌনতা একজন ব্যক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
জীবনীশক্তি হওয়ায়, বিভিন্ন ইরোটিক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ জীবনীশক্তি সক্রিয়
করার জন্য অপরিহার্য। যৌনতা একটি জৈবিক প্রবৃত্তি, যা পূরণ করা প্রয়োজন। এটি
উপস্থিত থাকলে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, এবং তা পূরণ হলে সন্তুষ্টি প্রদান করে।
যৌনতার প্রাথমিক প্রকাশ শরীরের কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত হয়, যা মূলত অযৌন যেমন
খাওয়ানো এবং বর্জ্য নিষ্কাশন। প্রতিটি ব্যক্তি জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে বিভিন্ন
স্তরের মধ্য দিয়ে যায়, এর পরবর্তী পাঁচ বা ছয় বছরের জন্য জীবনীশক্তির গতি
কম-বেশি স্থিতিশীল হয়ে যায়। কিশোর বয়সে পৌঁছানোর সাথে সাথে এই গতি আবার শুরু
হয় এবং ধীরে ধীরে এটি স্থিত হয় যখন একজন কিশোর প্রাপ্তবয়স্ক স্তরে প্রবেশ করে।
ফ্রয়েডের মতে, জীবনের প্রথম পাঁচ বছর ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে নির্ধারক।
প্রতিটি মনোবৈকল্যগত বিকাশের স্তর শরীরের
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত হয়। একজন
নবজাতকের জীবনের প্রথম ১৮ মাসে মুখ হলো গতিশীল ক্রিয়াকলাপের প্রধান অঞ্চল। তাই এই
পর্যায়টিকে মৌখিক স্তর (Oral Stage) বলা হয়। মৌখিক স্তরের পরে আসে মলত্যাগ
সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ থেকে আনন্দ প্রাপ্তির পর্যায়, তাই এটি মলদ্বার স্তর (Anal
Stage) নামে পরিচিত। এটি আরও ১৮ মাস স্থায়ী হয় এবং তারপরে আসে লিঙ্গীয় স্তর
(Phallic Stage), যেখানে যৌন অঙ্গ প্রধান ইরোজেনাস অঞ্চল হিসেবে কাজ করে। এই
পর্যায়গুলোতে মুখ, মলদ্বার এবং বাইরের যৌন অঙ্গের শ্লেষ্মা ঝিল্লি বিকাশের স্তর
অনুযায়ী শিশুর ইরোটিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। পাঁচ বছরের শেষে, শিশু
গোপনীয়তা পর্যায়ে (Latency Period) প্রবেশ করে, যেখানে যৌন আকাঙ্ক্ষাগুলো দমন
অবস্থায় থাকে। কিশোর বয়সের শুরুতে প্রাক-যৌন প্রবৃত্তিগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়
এবং ব্যক্তি যৌনাঙ্গীয় স্তরের (Genital Stage) বিকাশে প্রবেশ করে।
এই স্তরগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল
Fig: Source(knownPsychology)
মৌখিক স্তরে বিকশিত ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যাবলী
মৌখিক স্তরে চোষা এবং গিলার কাজগুলো জীবনের পরবর্তী সময়ে বিকাশিত ব্যক্তিত্বের
বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রোটোটাইপ হিসেবে কাজ করে। মৌখিক গ্রহণ থেকে প্রাপ্ত আনন্দ
অন্যান্য গ্রহণমূলক উপায় যেমন জ্ঞান অর্জন বা সম্পত্তি সংগ্রহের আনন্দে
স্থানান্তরিত হতে পারে। কামড়ানো বা মৌখিক আগ্রাসন বিদ্রূপ বা বিতর্কপ্রবণতার
আকারে প্রকাশ পেতে পারে। বিভিন্ন ধরণের স্থানান্তর এবং পরিশোধনের প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে, এবং মৌলিক মৌখিক আবেগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এই
মৌখিক কার্যকলাপের প্রোটোটাইপগুলি ব্যক্তির আগ্রহ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চরিত্র
বৈশিষ্ট্যের বিশাল নেটওয়ার্কের বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে।
মৌখিক স্তরের সময় শিশু সম্পূর্ণভাবে
মায়ের উপর নির্ভরশীল থাকে, যা এই সময়ে নির্ভরশীলতার অনুভূতির সৃষ্টি করে। যদি মা
শিশুর প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হন, নির্ভরশীলতা আশা অর্জনের পথে নিয়ে যায়। এই আশা
হলো সেই বিশ্বাস, যা বলে যে মায়ের মাধ্যমে শিশুর চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ হবে। এই
বিশ্বাসটি শিশুকে মায়ের সাথে এক বিশ্বাসযোগ্য ও উষ্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়তা
করে, যা শেষ পর্যন্ত জীবনে আশাবাদী মনোভাব নিয়ে আসে। মা এবং শিশুর মধ্যে একটি
পোষণমূলক এবং উষ্ণ সম্পর্ক এই সময়ে বিকশিত হলে, এটি জীবনের পরবর্তী সময়ে অন্যদের
সাথে বিশ্বাসযোগ্য এবং স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করে। মা
কর্তৃক প্রত্যাখ্যান বা শিশুর প্রয়োজন পূরণ না হওয়া থেকে সৃষ্ট অতিরিক্ত হতাশা
পরবর্তী জীবনে হতাশা ও অবিশ্বাসের জন্ম দিতে পারে। এটি মৌখিক স্তরেই ঘটে, যেখানে
শিশুর তার পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতি এবং সেই ব্যক্তিদের প্রতি
ভালোবাসা বা ঘৃণার অনুভূতি বিকাশ লাভ করে। যদি এই সময়ের মধ্যে মা ও শিশুর মধ্যে
মৌলিক উষ্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এটি পরবর্তী জীবনে অন্যদের সাথে
বিশ্বাসযোগ্য এবং স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভিত্তি স্থাপন করে।
যদি মৌখিক স্তরের চোষার পর্যায়ে
কঠোরভাবে স্থির থাকা ব্যক্তিদের আশাবাদ স্বাভাবিক হয়, তবে মৌখিক কামড়ানোর
পর্যায়ের হতাশা সঠিকভাবে সমাধান না হওয়া ব্যক্তিদের জন্য হতাশাবাদী মনোভাব
সাধারণ বৈশিষ্ট্য। চরম অবস্থায় এই হতাশাবাদ স্বাভাবিক সীমার বাইরে চলে যেতে পারে
এবং মানসিক বিষণ্নতার রূপ নিতে পারে। সুতরাং প্রথম বছরের মধ্যেই ব্যক্তিত্বের কিছু
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
মলদ্বার পর্যায়ে বিকশিত ব্যক্তিত্বের
বৈশিষ্ট্যাবলী
মনোবিশ্লেষণের মতে, মলদ্বার পর্যায়ে শিশুর ইগো বা আত্মসত্তার বিকাশ সম্পূর্ণ হয়।
এর ফলে সন্তানের বাস্তবতার অনুভূতি আনন্দ খোঁজার প্রবণতাকে অতিক্রম করে। মায়ের
যত্ন এবং টয়লেট প্রশিক্ষণের সময় উদ্ভূত দ্বন্দ্বগুলো শিশুর আনন্দ খোঁজার দিক
পরিবর্তন করে। কিছু ব্যক্তির মধ্যে দেখা compulsive neatness বা অতিরিক্ত
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রায়ই মলদ্বার পর্যায়ে একটি ধরনের পশ্চাদপসরণ হিসেবে দেখা
হয়। টয়লেট প্রশিক্ষণের পদ্ধতি এবং মায়ের মনোভাবের উপর নির্ভর করে এই
প্রশিক্ষণের ফলাফল ব্যক্তির নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য গঠনে গভীর প্রভাব
ফেলতে পারে।
যদি মা খুব কঠোর এবং দমনমূলক পদ্ধতি
অবলম্বন করেন, শিশু মল আটকে রাখতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। এই
প্রতিক্রিয়া যদি অন্য আচরণের সাথে একত্রিত হয়, তবে শিশুর একটি সংরক্ষণশীল চরিত্র
বিকাশ লাভ করে, যেখানে জেদি এবং কৃপণ স্বভাব দেখা যায়। অপরদিকে, যদি শিশু রাগের
বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনুপযুক্ত সময়ে মল ত্যাগ করে, তাহলে নিষ্ক্রিয় বৈশিষ্ট্য যেমন
নিষ্ঠুরতা, ধ্বংসাত্মকতা, রাগের ঝটকা, এবং অগোছালো আচরণ বিকশিত হয়। এভাবে,
মলদ্বার পর্যায়ে ব্যক্তিত্বের অনেক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
টয়লেট প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ
কার্যকলাপ, কারণ এটি একটি ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধ এবং বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়।
শিশুটি শিখে কীভাবে মলত্যাগের ফলে উদ্ভূত আনন্দকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে আনতে
হয়। মলদ্বার নির্গমন পর্যায়ের স্বাভাবিক প্রবাহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে
অন্ত্র, অন্ত্রের অভ্যাস এবং দৈনিক মলত্যাগের প্রতি আগ্রহ। কিছু মানুষ এতটাই
অন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে যে এই আগ্রহ তাদের ব্যক্তিত্বের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
মলসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব সমাধানে ব্যর্থতা এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের সমষ্টি তৈরি করে,
যাকে মলদ্বার চরিত্র বলা হয়। মলদ্বার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অত্যধিক বিশদ
বিবরণে মনোযোগ এবং অসম ব্যক্তিত্ব অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা সহজেই রাগের বিস্ফোরণে
পরিণত হয়।
ফ্যালিক স্তর
এই স্তরটি শুরু হয় যখন শিশুটি তিন বছর বয়সী হয় এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়ে শিশুর মধ্যে যৌনতার আভাস দেখা যায়। শিশু তার যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলে, উত্তেজনা কমায় এবং আনন্দ অনুভব করে। ইরোটিক ক্রিয়াকলাপ প্রাথমিকভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে মূত্রত্যাগের সঙ্গে যুক্ত থাকে। মূত্রত্যাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপ, কারণ এটি শিশুকে তার লিঙ্গ পরিচয় সংহত করতে সহায়তা করে। একজন ছেলে বুঝতে পারে যে সে একটি ছেলে, একইভাবে একজন মেয়ে বুঝতে পারে যে সে একটি মেয়ে, প্রাথমিকভাবে মূত্রত্যাগ প্রক্রিয়া থেকে।
ফ্যালিক স্তরের বিকাশের সময়, যৌনাঙ্গের কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত যৌন অনুভূতিগুলি কেন্দ্রীভূত হয়ে ওঠে। যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলার আনন্দ এবং শিশুর কল্পনার জগৎ ওডিপাস এবং ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সের উদ্ভবের জন্য পথ তৈরি করে। ছেলেদের মধ্যে ওডিপাস কমপ্লেক্স এবং মেয়েদের মধ্যে ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স দেখা যায়। ওডিপাস কমপ্লেক্সের নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক রাজা ওডিপাসের নামে, যিনি তার বাবাকে হত্যা করেছিলেন এবং তার মাকে বিয়ে করেছিলেন। ওডিপাস কমপ্লেক্সের মধ্যে থাকে বিপরীত লিঙ্গের পিতামাতার প্রতি যৌন আসক্তি এবং একই লিঙ্গের পিতামাতার প্রতি শত্রুতা। ছেলে শিশুটি তার মাকে পেতে চায় এবং তার বাবাকে সরিয়ে দিতে চায়। ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স অনুযায়ী, মেয়ে শিশুটি তার বাবাকে পেতে চায় এবং মাকে সরিয়ে দিতে চায়। এই অনুভূতিগুলি শিশুর কল্পনায় প্রকাশ পায়, বিশেষত হস্তমৈথুনের সময়। ফ্যালিক স্তরের প্রধান ঘটনাগুলোর মধ্যে ওডিপাস এবং ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সের উদয়কে অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।
ওডিপাস কমপ্লেক্সে ছেলেটির মায়ের প্রতি অজাচারমূলক আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং বাবার প্রতি ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ অনুভব করে। সে কল্পনা করে যে তার বাবা তাকে ক্ষতি করতে চায়। বাবার শাস্তিমূলক এবং ক্ষুব্ধ আচরণের হুমকি এই ভয়কে আরও নিশ্চিত করতে পারে। বাবার দ্বারা কী ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে তার ভয় মূলত তার যৌনাঙ্গের উপর কেন্দ্রীভূত, কারণ এটি মায়ের প্রতি তার আসক্তির উৎস। সে ভয় পায় যে তার বাবা তার যৌনাঙ্গ সরিয়ে ফেলবে। এই বীর্যহীনতার ভয় (Castration Anxiety) তাকে ওডিপাস কমপ্লেক্স সমাধান করতে সহায়তা করে, কারণ সে তার যৌনাঙ্গ হারাতে চায় না। এই ভয় মায়ের প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং বাবার প্রতি শত্রুতা দমন করে। বাবার সাথে নিজেকে একীভূত করা ওডিপাস কমপ্লেক্সের সমাধানে সাহায্য করে। বাবার সাথে নিজেকে একীভূত করার মাধ্যমে ছেলে শিশুটি মায়ের প্রতি তার ইরোটিক অনুভূতিগুলোকে নিরাপদ ভালোবাসায় রূপান্তরিত করে। ওডিপাস কমপ্লেক্স শিশুর যৌন বিকাশের শীর্ষবিন্দু বলে বিবেচিত হয়।
ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সে, মেয়ে শিশু তার মাকে ছেড়ে তার প্রেমের লক্ষ্য বাবার প্রতি স্থানান্তরিত করে। এটি ঘটে যখন মেয়েটি বুঝতে পারে যে তার একটি ছেলের মতো প্রসারিত যৌনাঙ্গ নেই, যা তাকে কম সজ্জিত করে তুলেছে। সে তার মাকে এর জন্য দায়ী করে এবং তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। সে তার বাবার প্রতি তার ভালোবাসা স্থানান্তরিত করে, কারণ তার কাছে সেই মূল্যবান অঙ্গ রয়েছে, যা মেয়েটি ভাগ করতে চায়। তবে, বাবার প্রতি তার ভালোবাসার সাথে ঈর্ষার অনুভূতি জড়িয়ে থাকে, কারণ বাবার কাছে যা আছে তা তার নেই। লিঙ্গ ঈর্ষা ছেলেদের বীর্যহীনতার ভয়ের বিপরীত। মেয়েটি বাবার প্রতি তার অজাচারমূলক আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকার করে এবং বাস্তবতায় সমাধান করে, যা তাকে বাবার প্রতি তার যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে বাধা দেয়। ফ্রয়েডের মতে, ওডিপাস এবং ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্সের সমাধানের মধ্যে পার্থক্যগুলো লিঙ্গের মধ্যে বিদ্যমান অনেক মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্যের ভিত্তি তৈরি করে।
গোপনীয় স্তর (Latency Stage)
বয়স: ফ্রয়েডের মতে, পঞ্চম বছরের শেষে শিশুর যৌনতা ধীরে ধীরে দমন করা হয়, সামাজিক পরিণতির ভয় এবং ভালোবাসার বস্তুটি অপ্রাপ্য হওয়ার উপলব্ধির কারণে। প্রায় ৫ বা ৬ বছর বয়সের সময়কালে, শিশু যৌন বিষয় নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা করে না। 'ল্যাটেন্সি' শব্দের আক্ষরিক অর্থ অনুসারে, এই পর্যায়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা লুকানো থাকে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
বাহ্যিক আগ্রহ: শিশুর সক্রিয় আগ্রহ ক্রমশ বাহ্যিক দিকে ঘুরে যায়। এই সময়কালে, যৌন আকাঙ্ক্ষা বিনোদনমূলক, একাডেমিক এবং সামাজিক কার্যকলাপে পরিণত হয়।
সামাজিক আচরণ: শিশু সমাজে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শিখে এবং তার আদর্শ অর্জন করে।
আবেগপ্রবণতা: যৌন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয় পিতামাতা এবং বন্ধুদের প্রতি সংযুক্তির মাধ্যমে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে।
প্রতিযোগিতা: শিশু তার সমস্ত শক্তি ব্যয় করে নিজেকে প্রমাণ করতে এবং উৎকর্ষতা অর্জন করতে। শিশুর শক্তি দক্ষতা বিকাশের দিকে পরিচালিত হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান: এই পর্যায়ে শিশুর যৌন আকাঙ্ক্ষা বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানের অধীন হয়।
মনোবিশ্লেষণ: ফ্রয়েডের মতে, ফ্যালিক পর্যায়ের পর ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্পর্কে মনোবিশ্লেষণ খুব কমই বলে। তবে, এটি জেনিটাল পর্যায়ের বিকাশ বিশ্লেষণ করে।
এই পর্যায়টি শিশুর মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তার ভবিষ্যতের ব্যক্তিত্ব এবং আচরণে প্রভাব ফেলে।
জেনিটাল স্তর (Genital Stage)
এই স্তরটি কিশোর বয়সের শুরুতে শুরু হয়। জেনিটাল স্তরে যৌন অনুভূতিগুলি নতুন তীব্রতা এবং আরও পরিপক্ক আকারে পুনরায় প্রকাশ পায়। এর ফলে শিশুর আত্মপ্রেম প্রকৃত বিপরীত লিঙ্গের সম্পর্কের দিকে প্রবাহিত হয়। যৌন আকর্ষণ, সমাজীকরণ, দলগত কার্যক্রম, পেশাগত পরিকল্পনা এবং বিয়ে ও পরিবার গঠনের প্রস্তুতি এই সময়ে প্রকাশ পেতে শুরু করে। কৈশোরের শেষে এই সমস্ত চিন্তা-ভাবনা বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। একজন ব্যক্তি আনন্দ-অন্বেষী, আত্মমগ্ন শিশু থেকে বাস্তবমুখী, সমাজমুখী প্রাপ্তবয়স্কতে রূপান্তরিত হয়। জেনিটাল স্তরের মূল জীববিজ্ঞানিক কাজ হলো প্রজনন।
মানসিক বিকাশে যৌন-মনস্তাত্ত্বিক স্তরের গুরুত্ব
আমাদের অনেক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং আচরণগত প্যাটার্ন যৌন-মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের স্তরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে প্রাপ্তবয়স্কদের আচরণকে শৈশব যৌন-মনস্তাত্ত্বিক স্তরের ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফ্রয়েডের মতে, ব্যক্তিরা তাদের আচরণের মধ্যে যৌনশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে মানসিক প্রক্রিয়া যেমন স্থানান্তর, পরিশোধন এবং প্রতিক্রিয়াগত গঠনের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রাপ্তবয়স্কের যৌন কল্পনা ফ্যালিক স্তরের যৌনতার একটি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হয়। অনুরূপভাবে, অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা বা অত্যধিক শৃঙ্খলা এবং সময়নিষ্ঠতা হল শৈশব যৌনতার এনাল স্তরের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ামূলক গঠন হিসেবে বিবেচিত হয়। যৌন-মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের প্রক্রিয়া হলো এক প্রকার দ্বন্দ্বমূলক বৃদ্ধি, যা বিভিন্ন স্তরে অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক আচরণের বিকাশ ঘটাতে পারে।
ফ্যালিক পর্যায়ে বিকশিত ব্যক্তিত্বের
বৈশিষ্ট্য
ফ্যালিক পর্যায়ের সময় শিশুর আচরণ উল্লেখযোগ্যভাবে ওডিপাস কমপ্লেক্সের প্রভাবে
চিহ্নিত হয়। যদিও পাঁচ বছর বয়সের পরে এটি পরিবর্তিত হয়, এই কমপ্লেক্সের প্রভাব
সারাজীবন ব্যক্তিত্বে সক্রিয় থাকে। বিপরীত লিঙ্গ এবং কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিদের
প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ওডিপাস কমপ্লেক্স দ্বারা অনেকটাই নির্ধারিত হয়। ওডিপাস
কমপ্লেক্সের দমন সুপারইগোর চূড়ান্ত বিকাশ ঘটায়। ফ্রয়েডের মতে, ওডিপাস এবং ইলেকট্রা
কমপ্লেক্সের সমাধানে যে পার্থক্য দেখা যায়, তা পরবর্তী জীবনে পুরুষ এবং নারীর
ব্যক্তিত্বের পার্থক্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
ফ্রয়েড নারীদের দুর্বল, নির্ভরশীল
এবং নিকৃষ্ট বলে বিবেচনা করতেন, যা "লিঙ্গ ইর্ষা" এবং এর সাথে সম্পর্কিত
মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফল। এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা
দেখা দিয়েছে এবং প্রভাবশালী মনোবিশ্লেষক কারেন হর্নি এই সমালোচনার নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন। সকল মনোবৈকল্য পর্যায়ের মধ্যে ফ্যালিক পর্যায়টি সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ের বিকাশগুলি ব্যক্তিত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।
ওডিপাস প্রবৃত্তি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক যৌনতায় রূপান্তর সাধারণ বিকাশের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ওডিপাস কমপ্লেক্সের সমাধানে ব্যর্থতা প্রাপ্তবয়স্ক
নিউরোসিসের কেন্দ্রীয় কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়। ফ্রয়েডের মতে, নিউরোসিসগুলোর
বৈশিষ্ট্য হলো অবচেতনভাবে ওডিপাস প্রবৃত্তির প্রতি আকর্ষণ ধরে রাখা। শিশুটি কীভাবে
ওডিপাস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে, তা তার চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে গভীর
প্রভাব ফেলে।
ল্যাটেন্সি ও জেনিটাল পর্যায়ে বিকশিত
ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য
ফ্রয়েড শিশুর যৌনতার বিভিন্ন রূপ এবং তার মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের উপর প্রভাব নিয়ে
খুব বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এর ফলে, ল্যাটেন্সি ও জেনিটাল পর্যায়ের বিকাশ এবং
ব্যক্তিত্বের সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে ফ্রয়েড তেমন কিছু লেখেননি। মনোবিশ্লেষণ এই
দুটি পর্যায়ের তুলনায় প্রথম তিনটি পর্যায়ের বিকাশকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
ল্যাটেন্সি পর্যায়ের বিকাশ শিশুকে
দক্ষতা এবং শ্রমশীলতার বোধ অর্জনে সহায়তা করে। এই পর্যায়ে শিশুর বিভিন্ন অযৌন
কার্যকলাপে (যেমন: খেলাধুলা, একাডেমিক এবং সামাজিক কার্যকলাপ) প্রবৃত্তির মোড়
ঘুরে যায়, যার ফলে শিশুটি নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ পায় এবং সৃজনশীল হতে
পারে।
জেনিটাল পর্যায়, যা সাধারণত কিশোর বয়সের শুরুতে শুরু হয়, এমন একটি সময় যখন
দলগত কার্যকলাপ, পেশাগত পরিকল্পনা এবং পরিবার জীবনের প্রস্তুতি গুরুত্ব পায়।
কিশোর বয়সের শেষের দিকে, এই সমাজমুখী, পরার্থপর অনুভূতিগুলো বেশ শক্তভাবে
প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় একজন ব্যক্তি আনন্দ খোঁজার প্রবণতা থেকে সরে এসে
বাস্তববাদী, সমাজমুখী একজন প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হয়।
শিক্ষাগত প্রয়োগ:
ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণ তত্ত্ব মানব মনের
গঠন এবং মানব আচরণের অধ্যয়ন ও মানসিক রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশকে ফ্রয়েড দ্বারা নির্ধারিত বিভিন্ন
ব্যক্তিত্বের স্তর, যেমন মৌখিক স্তর থেকে যৌনাঙ্গীয় স্তর পর্যন্ত, বোঝার মাধ্যমে
মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
মনের গঠনের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রয়োজন
অনুযায়ী মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। অতএব, ফ্রয়েডের
ব্যক্তিত্ব বিকাশ সম্পর্কে অবদানের গুরুত্ব বিপ্লবাত্মক বলে মনে করা হয়।