বিষয়: সমবয়সী মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ (Peer Mediated Instructions)
শ্রেণি-ব্যাপী
সমবয়সী টিউটরিং এবং সমবয়সী সহায়ক শিক্ষণ কৌশল(
Strategies
১. ভূমিকা ও পটভূমি (Introduction and Background)
সমবয়সী
মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ (Peer Mediated
Instructions) হলো এমন একটি
শিক্ষণ কৌশল, যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের কাছ থেকে
শিখে এবং একে অপরকে শেখায়। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, সমবয়সী সম্পর্ক এবং সামাজিক দক্ষতা
বৃদ্ধি করে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায়
বিশেষভাবে কার্যকর। এটি শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণে সহায়ক, বিশেষ করে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য। সমবয়সী মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের
একাডেমিক, সামাজিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য একটি
সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
এই নোটে দুটি
প্রধান সমবয়সী মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ কৌশল—শ্রেণি-ব্যাপী সমবয়সী টিউটরিং (Class Wide Peer Tutoring, CWPT) এবং সমবয়সী সহায়ক শিক্ষণ কৌশল (Peer Assisted Learning Strategies,
PALS)—নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই
কৌশলগুলি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিশেষত ‘অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি অধিকার আইন, ২০১৬’ (RPWD Act, 2016) এবং ‘জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০’ (NEP 2020)-এর আলোকে
প্রাসঙ্গিক। এই পদ্ধতিগুলি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতামূলক শিক্ষণ, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে
সহায়ক।
২. শ্রেণি-ব্যাপী সমবয়সী টিউটরিং (Class Wide Peer Tutoring, CWPT)
বর্ণনা (Description)
শ্রেণি-ব্যাপী
সমবয়সী টিউটরিং (CWPT) হলো একটি শিক্ষণ কৌশল, যেখানে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থী জোড়ায়
জোড়ায় কাজ করে, যেখানে একজন শিক্ষার্থী টিউটর (শিক্ষক)
এবং অপরজন টিউটি (শিক্ষার্থী) হিসেবে কাজ করে। এই ভূমিকাগুলি নিয়মিতভাবে পরিবর্তন
করা হয়, যাতে সকল শিক্ষার্থী শেখার এবং শেখানোর
সুযোগ পায়। CWPT শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত
এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষণ পরিবেশ তৈরি
করে।
বৈশিষ্ট্য (Features)
- জোড়া গঠন: শিক্ষার্থীদের জোড়ায় ভাগ করা হয়, সাধারণত মিশ্র সক্ষমতার জোড়া।
- ভূমিকা
পরিবর্তন: টিউটর এবং
টিউটির ভূমিকা নিয়মিত পরিবর্তন করা হয়।
- উপযুক্ত
পরিস্থিতি: পড়া, গণিত, বানান বা অন্যান্য একাডেমিক দক্ষতার জন্য কার্যকর।
- শিক্ষার্থীর
বৈচিত্র্য: সাধারণ
শিক্ষার্থী, বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত।
কৌশল (Strategies)
- জোড়া
নির্বাচন:
- শিক্ষার্থীদের
মিশ্র সক্ষমতার ভিত্তিতে জোড়া তৈরি করা, যাতে প্রতিভাধর শিক্ষার্থী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন
শিক্ষার্থী একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে।
- উদাহরণ:
একজন দ্রুত শিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং একজন ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন
শিক্ষার্থীকে এক জোড়ায় রাখা।
- টিউটর
প্রশিক্ষণ:
- শিক্ষার্থীদের
টিউটর হিসেবে কীভাবে প্রশ্ন করতে হয়, প্রতিক্রিয়া দিতে হয় এবং সহায়তা করতে হয় তা
শেখানো।
- উদাহরণ:
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সহজ প্রশ্ন করার কৌশল বা ভুল সংশোধনের পদ্ধতি শেখান।
- সংক্ষিপ্ত
এবং গঠনমূলক কার্যক্রম:
- নির্দিষ্ট
সময়ের জন্য (১৫-২০ মিনিট) টিউটরিং সেশন, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কাজে ফোকাস করে।
- উদাহরণ:
বানান শেখার জন্য ফ্ল্যাশকার্ড বা গণিতের সমস্যা সমাধান।
- প্রতিক্রিয়া
ও পুরস্কার:
- শিক্ষার্থীদের
সঠিক উত্তরের জন্য মৌখিক প্রশংসা, পয়েন্ট বা পুরস্কার প্রদান।
- উদাহরণ:
সঠিক উত্তরের জন্য পয়েন্ট সংগ্রহ এবং সপ্তাহের শেষে পুরস্কার।
- প্রযুক্তিগত
সহায়তা:
- ডিজিটাল
ডিভাইস বা শিক্ষণমূলক অ্যাপ ব্যবহার করে টিউটরিং প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ করা।
- উদাহরণ:
পড়ার জন্য অডিও বই বা গণিতের জন্য ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ।
- বিশেষ
চাহিদার জন্য অভিযোজন:
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সরলীকৃত কার্যক্রম বা দৃশ্যমান সহায়ক
উপকরণ।
- উদাহরণ:
অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দৃশ্যমান সময়সূচী বা ফিজেট টয়।
সুবিধা (Advantages)
- শিক্ষার্থীরা
একে অপরের কাছ থেকে শেখার মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগত সহায়তা এবং সামাজিক
মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি।
- টিউটর হিসেবে
কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি।
- শ্রেণির
সামগ্রিক একাডেমিক ফলাফল এবং সহযোগিতা উন্নত হয়।
চ্যালেঞ্জ (Challenges)
- শিক্ষার্থীদের
মধ্যে সঠিক জোড়া গঠন করা এবং সমন্বয় বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।
- টিউটরদের
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে শিক্ষণের গুণগত মান কমতে পারে।
- শিক্ষার্থীদের
মধ্যে আচরণগত সমস্যা বা মনোযোগের অভাব থাকতে পারে।
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয়তা
- এই পদ্ধতি
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে একাডেমিক দক্ষতা (যেমন, পড়া, গণিত) উন্নয়নে কার্যকর।
- উদাহরণ:
পড়ার দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীরা জোড়ায় জোড়ায় বই পড়ে এবং
প্রশ্নোত্তর করে।
- RPWD Act, 2016 এবং NEP 2020-এর আলোকে এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের
সমান অংশগ্রহণ এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।
৩. সমবয়সী সহায়ক শিক্ষণ কৌশল (Peer Assisted Learning Strategies,
PALS)
বর্ণনা (Description)
সমবয়সী সহায়ক
শিক্ষণ কৌশল (PALS) হলো একটি গঠনমূলক শিক্ষণ পদ্ধতি, যেখানে শিক্ষার্থীরা জোড়ায় কাজ করে
নির্দিষ্ট একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেয়। PALS বিশেষভাবে পড়া এবং গণিতের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডিজাইন
করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও প্রতিক্রিয়ার উপর জোর
দেয়। এটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত।
বৈশিষ্ট্য (Features)
- গঠনমূলক
কার্যক্রম: নির্দিষ্ট
কার্যক্রম (যেমন, পড়া, গণিত) এবং প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া।
- জোড়া গঠন: মিশ্র সক্ষমতার জোড়া, যেখানে শিক্ষার্থীরা টিউটর এবং
টিউটির ভূমিকা পালন করে।
- উপযুক্ত
পরিস্থিতি: পড়া, গণিত বা অন্যান্য একাডেমিক দক্ষতার
জন্য কার্যকর।
- শিক্ষকের
তত্ত্বাবধান: শিক্ষকরা
কার্যক্রম পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া প্রদান করেন।
কৌশল (Strategies)
- PALS পড়ার কৌশল:
- পার্টনার
রিডিং: একজন
শিক্ষার্থী জোরে পড়ে, এবং অপরজন শুনে এবং ভুল সংশোধন করে।
- প্যারাগ্রাফ
শ্রিংকিং: শিক্ষার্থীরা
পড়া প্যারাগ্রাফের মূল ধারণা সংক্ষেপে বর্ণনা করে।
- প্রেডিকশন
রিলে: শিক্ষার্থীরা
পড়ার আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং পড়ার পর তা যাচাই করে।
- উদাহরণ:
ইংরেজি পাঠে শিক্ষার্থীরা জোড়ায় জোড়ায় গল্প পড়ে এবং প্রশ্নোত্তর করে।
- PALS গণিতের কৌশল:
- শিক্ষার্থীরা
জোড়ায় গণিতের সমস্যা সমাধান করে এবং একে অপরকে পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে।
- উদাহরণ:
গণিতে দ্রুত শিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থী পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে সমস্যা
সমাধানের ধাপ বুঝিয়ে দেয়।
- প্রতিক্রিয়া
প্রক্রিয়া:
- শিক্ষার্থীরা
একে অপরকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং সংশোধনমূলক পরামর্শ দেয়।
- উদাহরণ: ভুল
উত্তরের ক্ষেত্রে টিউটর সঠিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে।
- প্রযুক্তিগত
সহায়তা:
- ডিজিটাল
ডিভাইস বা শিক্ষণমূলক অ্যাপ ব্যবহার করে PALS কার্যক্রম সমৃদ্ধ করা।
- উদাহরণ:
পড়ার জন্য টেক্সট-টু-স্পিচ সফটওয়্যার বা গণিতের জন্য ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ।
- বিশেষ
চাহিদার জন্য অভিযোজন:
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সরলীকৃত কার্যক্রম বা দৃশ্যমান সহায়ক
উপকরণ।
- উদাহরণ:
ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অডিও বই বা বড় মুদ্রণ।
- শিক্ষকের
ভূমিকা:
- শিক্ষকরা
শিক্ষার্থীদের জোড়া তৈরি, কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রতিক্রিয়া প্রদানে সহায়তা
করেন।
- উদাহরণ:
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের টিউটরিং কৌশল শেখান এবং তাদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ
করেন।
সুবিধা (Advantages)
- শিক্ষার্থীদের
একাডেমিক দক্ষতা (বিশেষ করে পড়া এবং গণিত) উন্নত হয়।
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগত সহায়তা এবং সামাজিক
মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি।
- শিক্ষার্থীদের
মধ্যে সহযোগিতা, যোগাযোগ এবং
নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি।
- শ্রেণির
সামগ্রিক শিক্ষণ পরিবেশ উন্নত হয় এবং শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
চ্যালেঞ্জ (Challenges)
- শিক্ষার্থীদের
মধ্যে সঠিক জোড়া গঠন এবং সমন্বয় বজায় রাখা কঠিন হতে পারে।
- শিক্ষার্থীদের
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে টিউটরিং প্রক্রিয়া কার্যকর নাও হতে পারে।
- শ্রেণির
ব্যবস্থাপনা এবং সময় ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
- বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত অভিযোজন প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয়তা
- এই পদ্ধতি
পড়া এবং গণিতের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
- উদাহরণ:
ইংরেজি পাঠে শিক্ষার্থীরা জোড়ায় পড়া এবং প্যারাগ্রাফ সংক্ষেপণ করে, যা ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন
শিক্ষার্থীদের পড়ার দক্ষতা উন্নত করে।
- NEP 2020-এর আলোকে এই পদ্ধতি সহযোগিতামূলক
শিক্ষণ এবং শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে।
৪. বাস্তবায়নের ধাপসমূহ (Steps for Implementation)
সমবয়সী
মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
ধাপ ১: শিক্ষার্থীদের চাহিদা মূল্যায়ন
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীদের শারীরিক, সংবেদী, জ্ঞানগত এবং সামাজিক চাহিদা সনাক্ত
করতে শিক্ষক, অভিভাবক বা
বিশেষ শিক্ষাবিদের সাথে পরামর্শ।
- সরঞ্জাম: শিক্ষাগত মূল্যায়ন, শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা প্রতিবেদন।
- উদাহরণ: শিক্ষার্থীর পড়ার দক্ষতা বা গণিতে
দুর্বলতা সনাক্তকরণ।
ধাপ ২: শিক্ষার্থীদের জোড়া গঠন
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীদের মিশ্র সক্ষমতা, আগ্রহ বা শিক্ষণ শৈলীর ভিত্তিতে
জোড়া তৈরি।
- বিবেচনা: শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা এবং
সহযোগিতার ক্ষমতা।
- উদাহরণ: প্রতিভাধর শিক্ষার্থী এবং বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের এক জোড়ায় রাখা।
ধাপ ৩: শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থীদের টিউটরিং কৌশল, প্রতিক্রিয়া প্রদান এবং সহযোগিতার
দক্ষতা শেখানো।
- পদ্ধতি: শিক্ষকের নির্দেশনা, মডেলিং এবং অনুশীলন সেশন।
- উদাহরণ: শিক্ষার্থীদের সহজ প্রশ্ন করার কৌশল
বা ভুল সংশোধনের পদ্ধতি শেখানো।
ধাপ ৪: কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ
- প্রক্রিয়া: CWPT বা PALS কার্যক্রম শ্রেণিকক্ষে বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থীদের
অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ।
- পদ্ধতি: শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া, একাডেমিক ফলাফল বিশ্লেষণ।
- উদাহরণ: পড়ার সেশনে শিক্ষার্থীদের পড়ার
গতি এবং বোঝাপড়া পর্যবেক্ষণ।
ধাপ ৫: মূল্যায়ন ও সমন্বয়
- প্রক্রিয়া: কার্যক্রমের কার্যকারিতা মূল্যায়ন
এবং প্রয়োজনে জোড়া বা কার্যক্রম পরিবর্তন।
- সরঞ্জাম: শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফল, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং
শিক্ষক-অভিভাবকের প্রতিক্রিয়া।
- উদাহরণ: যদি একটি জোড়া সফল না হয়, তবে নতুন জোড়া তৈরি বা কার্যক্রম
সরলীকরণ।
ধাপ ৬: অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ
- প্রক্রিয়া: শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে
নিয়মিত যোগাযোগ এবং তাদের মতামত গ্রহণ।
- উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীর অগ্রগতি এবং চাহিদা
সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।
- উদাহরণ: অভিভাবকদের সাথে শিক্ষার্থীর পড়ার
দক্ষতা বা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা।
৫. বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান (Challenges and Solutions)
চ্যালেঞ্জ
- জোড়া গঠনের
সমস্যা: শিক্ষার্থীদের
মধ্যে সামাজিক বা একাডেমিক বৈষম্যের কারণে জোড়া গঠন কঠিন হতে পারে।
- শিক্ষার্থীদের
প্রশিক্ষণ: শিক্ষার্থীদের
টিউটরিং দক্ষতা শেখানোর জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন।
- শ্রেণির
ব্যবস্থাপনা: শ্রেণিতে
শিক্ষার্থীদের আচরণ বা মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হতে পারে।
- বিশেষ
চাহিদার অভিযোজন: বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ বা সহায়তা প্রয়োজন।
- সম্পদের অভাব: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি বা
শিক্ষণ সামগ্রীর অভাব।
সমাধান
- জোড়া গঠনের
কৌশল: শিক্ষকদের
শিক্ষার্থীদের সামাজিক এবং একাডেমিক সক্ষমতার ভিত্তিতে সাবধানে জোড়া তৈরি
করা।
- প্রশিক্ষণ
কর্মসূচি: শিক্ষার্থীদের
জন্য সংক্ষিপ্ত এবং কার্যকর টিউটরিং প্রশিক্ষণ সেশন।
- শ্রেণির
ব্যবস্থাপনা: শিক্ষকদের
জন্য শ্রেণির নিয়ম ও সময়সূচী প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার
ব্যবস্থা।
- বিশেষ
চাহিদার সহায়তা: বিশেষ
শিক্ষাবিদের সহায়তায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অভিযোজিত
কার্যক্রম।
- সরকারি ও
বেসরকারি সহায়তা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
প্রযুক্তি, শিক্ষণ
সামগ্রী এবং অর্থায়নের জন্য সহযোগিতা।
৬. বাস্তব উদাহরণ ও সাফল্যের গল্প (Practical Examples and Success Stories)
- শ্রেণি-ব্যাপী
সমবয়সী টিউটরিং (CWPT):
- একটি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জোড়ায় জোড়ায় বানান শেখার জন্য
ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করে। একজন ডিসলেক্সিয়া সম্পন্ন শিক্ষার্থী তার
টিউটরের সহায়তায় বানানে উন্নতি করে এবং শ্রেণির বানান প্রতিযোগিতায় অংশ
নেয়।
- উদাহরণ: শিক্ষার্থীরা
গণিতের সমস্যা সমাধানে জোড়ায় কাজ করে, যেখানে প্রতিভাধর শিক্ষার্থী পিছিয়ে থাকা
শিক্ষার্থীকে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করে।
- সমবয়সী
সহায়ক শিক্ষণ কৌশল (PALS):
- ইংরেজি পাঠে
শিক্ষার্থীরা পার্টনার রিডিং এবং প্যারাগ্রাফ শ্রিংকিং কৌশল ব্যবহার করে।
একজন অটিজম সম্পন্ন শিক্ষার্থী তার টিউটরের সহায়তায় পড়ার বোঝাপড়া উন্নত
করে এবং গল্পের মূল ধারণা বর্ণনা করে।
- উদাহরণ:
গণিতে শিক্ষার্থীরা জোড়ায় সমস্যা সমাধান করে এবং একে অপরকে প্রতিক্রিয়া
দেয়, যা পিছিয়ে
থাকা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
- সাফল্যের
গল্প:
- ভারতের একটি
স্কুলে PALS প্রয়োগ করে
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পড়ার দক্ষতা উন্নত করা হয়। একজন
শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তার টিউটরের সহায়তায় পড়ার কৌশল শিখে এবং
স্কুলের গল্প বলার প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে।
৭. উপসংহার (Conclusion)
সমবয়সী মধ্যস্থতামূলক
শিক্ষণ একটি শক্তিশালী কৌশল, যা শিক্ষার্থীদের
একাডেমিক, সামাজিক এবং মানসিক উন্নতিতে সহায়ক।
শ্রেণি-ব্যাপী সমবয়সী টিউটরিং (CWPT) এবং সমবয়সী
সহায়ক শিক্ষণ কৌশল (PALS) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এই
পদ্ধতিগুলি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা
নিশ্চিত করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে।
শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিশেষ শিক্ষাবিদদের সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় এই কৌশলগুলি শ্রেণিকক্ষে বাস্তবায়ন করা যায়। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং সম্পদের মাধ্যমে সমবয়সী
মধ্যস্থতামূলক শিক্ষণ শিক্ষার্থীদের একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ প্রদান
করে।