Scope of Curricular Adaptation

পাঠ্যক্রম অভিযোজনের পরিধি Scope of Curricular Adaptation

পাঠ্যক্রম একটি ব্যাপক ধারণা হওয়ায় এর অভিযোজনেরও বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। আমরা বলতে পারি যে, পরিকল্পনা থেকে বিষয়বস্তু, শ্রেণিশিক্ষণ থেকে মূল্যায়ন পর্যন্ত অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়নের একটি বিস্তৃত পরিসর বিদ্যমান।

সাধারণভাবে, পাঠ্যক্রম অভিযোজনকে দুটি প্রধান বিভাগে বোঝা যায়:

1.    প্রবেশগত অভিযোজন (Accessibility Adaptation): স্থাপত্যিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা (যেমন: র্যাম্প, ব্রেইল সাইনেজ)।

2.    শিক্ষণগত অভিযোজন (Pedagogical Adaptation): পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু ও পদ্ধতিগত বাধা পরিবর্তন (যেমন: মাল্টি-সেনসরি শিক্ষণ কৌশল)।

এই অভিযোজনগুলো প্রধানত সাধারণ শ্রেণিকক্ষে বিশেষ প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে আলোচিত হয়।

প্রবেশগত অভিযোজনের সীমাবদ্ধতা

প্রবেশগত অভিযোজন (যেমন: স্কুলে হুইলচেয়ার র্যাম্প) শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করলেও সরাসরি জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষণের গুণমান নিশ্চিত করে নাঅনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা পাঠ্যক্রমিক অভিযোজন ছাড়াই বিশেষ প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীদের সাধারণ শ্রেণিকক্ষে ভর্তি করা হয়। এখানে মূল উদ্বেগটি হলো শারীরিক অন্তর্ভুক্তি (মাত্র স্কুলে আসা) এবং শিক্ষাগত অন্তর্ভুক্তির (প্রকৃত শিখন) মধ্যে ব্যবধান।

প্রকৃত অন্তর্ভুক্তির চ্যালেঞ্জ

"কীভাবে বিশেষ প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীদের অন্যদের সাথে শেখানো যায়" – এটি সমাবেশী শিক্ষার সবচেয়ে বড় জটিলতা। কারণ, অন্তর্ভুক্তি এখন কেবল একটি দর্শন বা নীতি নয়, বরং বাস্তব জীবনের একটি কংক্রিট কর্মপদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

পাঠ্যক্রম অভিযোজন প্রক্রিয়া (Process)

একটি শ্রেণিকক্ষে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অপরিহার্য:

1.    শিক্ষার্থীদের বিশেষ চাহিদা বোঝা

2.    উপযুক্ত অবকাঠামোগত সুবিধা

3.    একটি উষ্ণ, স্বাগতপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ

4.    প্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত শিক্ষক

5.    নমনীয় শিক্ষাসামগ্রী

6.    শিক্ষণ ও মূল্যায়নের কার্যকর কৌশল

7.    পর্যাপ্ত শিক্ষাদানের সময়

8.    প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা উপকরণের সুগম্যতা

9.    প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা শিক্ষকদের জন্য অবিচ্ছিন্ন সহায়তা

পাঠ্যক্রম অভিযোজন একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা এর সাথে সম্পর্কিত। একটি সফল পাঠ্যক্রম অভিযোজনের জন্য নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তমূলক ফ্লোচার্ট অনুসরণ করা যেতে পারে:

সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ:

1.    শিক্ষার্থীর চাহিদা মূল্যায়ন

o    শিক্ষার্থীর শক্তি ও দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ

o    বর্তমান পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যতা বিশ্লেষণ

2.    অভিযোজন পদ্ধতি নির্বাচন

o    প্রবেশগত অভিযোজন (Accessibility)

o    শিক্ষণগত অভিযোজন (Pedagogical)

o    মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন

3.    বাস্তবায়ন পরিকল্পনা

o    প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সম্পদ নির্ধারণ

o    সময়সীমা ও দায়িত্ব বণ্টন

4.    কার্যকর বাস্তবায়ন

o    শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ

o    শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ

5.    মূল্যায়ন ও পরিমার্জন

o    ফলাফল বিশ্লেষণ

o    প্রয়োজনে পদ্ধতি সংশোধন

এই প্রক্রিয়াটি একটি দলগত effort হিসেবে দেখা উচিত, যেখানে শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকরা একত্রে কাজ করেন। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাহিদা ভিন্ন, তাই অভিযোজনও হবে ব্যক্তিগত ও প্রাসঙ্গিক।

যুক্তিসঙ্গত সুবিধাদি (Reasonable Accommodation)

পাঠ্যক্রম অভিযোজনের ক্ষেত্রে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করা অপরিহার্য। অর্থাৎ, শুধু অভিযোজন করার জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীর সুনির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়। এজন্য তিনটি ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন:

১. শিক্ষকদের জন্য সুবিধা

বিভিন্ন কৌশলে পাঠদান:

  • মৌখিক, দৃশ্য, স্পর্শ বা চলনভিত্তিক (কাইনেসথেটিক) পদ্ধতি
  • সহজ থেকে জটিল, মূর্ত থেকে বিমূর্ত ধারণার অগ্রগতি
  • ধাপে ধাপে শেখানো, স্ক্যাফোল্ডিং, গ্রুপ ওয়ার্ক, পিয়ার টিউটরিং
  • পূর্ববর্তী জ্ঞান, ব্রেইনস্টর্মিং, নাট্যায়ন
  • বাড়তি সময় দেওয়া, বিকল্প কার্যক্রম দেওয়া
  • অ্যাসাইনমেন্ট সংক্ষিপ্তকরণ, শিক্ষাসফর আয়োজন
  • বড় ফন্ট, ব্রেইল বা স্পর্শযোগ্য উপকরণ, ব্লক/খেলনা, বাস্তব জীবনের উদাহরণ ব্যবহার

২. শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা

শেখা প্রকাশের বহুমুখী উপায়:

  • মৌখিক, লিখিত, স্পর্শভিত্তিক (ট্যাকচুয়াল), অঙ্গভঙ্গি, অঙ্কন, অভিনয়
  • আইসিটি ব্যবহার, প্রশ্ন তৈরি, জোড়ায় পড়া, গল্প বলা
  • গান, ছড়া, রোল প্লে, আলোচনা, বিতর্ক
  • ভাষার খেলা, ফ্ল্যাশ কার্ড, কুইজ, গ্রাফিক অর্গানাইজার
  • হাইলাইটিং, পেপার ফোল্ডিং/কাটিং

৩. শিখন উপকরণের সুবিধা

বিশেষ উপযোগী উপকরণ:

  • ক্যালকুলেটর/টকিং ক্যালকুলেটর, টেলর ফ্রেম, অ্যাবাকাস, ব্রেইলার
  • জ্যামিতিক কিট, স্পর্শবোর্ড (Tactile Board), স্পর্শগ্রাফ শীট
  • ত্রিমাত্রিক ব্লক ও আকৃতি, ফ্ল্যাশ কার্ড, পোস্টার
  • কম্পিউটার, অডিও বই, স্ক্রিন রিডার, ভয়েস সিনথেসাইজার
  • ডেইজি বই, সিডি/এমপিথ্রি, টকিং ওয়াচ, ভিডিও
  • ক্লে মডেলিং, টেক্সচার্ড বস্তু, উঁচু লাইনের কাগজ, পাজল

বিভিন্ন বিষয়ের জন্য পাঠ্যক্রম অভিযোজন কৌশল

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরা প্রধানত অ-দৃশ্যমান পদ্ধতিতে শেখে, যেমন:

  • স্পর্শের মাধ্যমে বাস্তব ও মূর্ত বস্তু ব্যবহার
  • শ্রবণ, ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতি কাজে লাগানো

এছাড়া প্রাথমিক স্তরে সব বিষয়ে তাদের কিছু সাধারণ চাহিদা থাকে:

  • দৃশ্য উদ্দীপনা
  • অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন (পর্যবেক্ষণ/পরীক্ষামূলক শিখন)
  • প্রাসঙ্গিক শিখন (প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্ত শিখন)
  • ধারণা বোঝা: পার্শ্বিকতা (লেটারালিটি), সময়, অবস্থান, আকার, আকৃতি, সংযুক্তি, পার্থক্য, ক্রম, পরিমাণ, সংবেদন, আবেগ, রঙ (দৃষ্টিসীমা অনুযায়ী), মিলকরণ ও শ্রেণিবিন্যাস
  • দৃশ্য উপলব্ধি: ছবি, ডায়াগ্রাম, মানচিত্র, চার্ট, গ্রাফ থেকে শেখা
  • প্রাথমিক বছরগুলিতে ধীর জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া (ইন্দ্রিয়গুলির সমন্বয় হওয়া পর্যন্ত)

Post a Comment

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

Previous Post Next Post